সালমান এফ রহমান বাংলাদেশের রাজনীতি এবং অর্থনীতি কতটুকু প্রভাবিত করেন?
প্রায়ই শোনা যায় সালমান এফ রহমান তার ক্ষমতা দিয়ে বাংলাদেশের রাজনীতি এবং অর্থনীতি প্রভাবিত করেন। অনেকের মতে সালমান এফ রহমান তাঁর অবস্থান থেকে বাংলাদেশের রাজনীতির অনেক পলিসি নির্ধারণ করেন এবং পাশাপাশি দেশের অর্থনীতি আগামীতে কোনদিকে যাবে সেটাও নির্ধারণ করেন। অবশ্য, তাকে প্রশ্ন করলে তিনি ব্যাপারটা অস্বীকার করেন অথবা এড়িয়ে যান। আওয়ামী লীগ সরকারের উচ্চ মহলের এ প্রশ্নটি ছুড়ে দিলে তারাও ব্যাপারটি এড়িয়ে যান।
তথ্য উপাত্ত কি বলে? মেইনস্ট্রিম মিডিয়া কি বলে? সালমান এফ রহমানের কাছের মানুষেরা কি মনে করেন? তিনি কি এতই শক্তিশালী এতই ক্ষমতা বা যে বাংলাদেশের রাজনীতির পলিসি নির্ধারণ করেন এবং অর্থনীতি আগামীতে কোন দিকে যাবে সেটা নির্ধারণ করেন?
![]() |
সালমান এফ রহমানের ক্ষমতা |
উপরের ছুড়ে দেয়া প্রশ্নগুলোর সহজ উত্তর হল - হ্যাঁ, তিনি এতই ক্ষমতাবান। সালমান এফ রহমান বহু বছর আগে থেকেই আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে জড়িত। প্রথমদিকে সরাসরি রাজনীতিতে যোগ না দিলেও তিনি রাজনীতির ময়দানে সবসময়ই সরব ছিলেন। তিনি মুলত বহুল পরিচিত একজন সফল ব্যবসায়ী হিসেবে। বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান এবং বৃহৎ প্রাইভেট সেক্টর কম্পানি বেক্সিমকো গ্রুপের মালিক তিনি। আশির দশক থেকেই তার প্রতিষ্ঠা করা কম্পানি বেক্সিমকো গ্রুপ বাংলাদেশের অর্থনীতিতে ব্যাপকভাবে অবদান রেখে এসেছে এবং অনেক ক্ষেত্রেই দেশের সার্বিক ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ডে প্রভাব ফেলেছে। বেক্সিমকো গ্রপ যত বড় হয়েছে, প্রতিষ্ঠানের কর্মপরিধি যত ব্যাপক হয়েছে তার সাথে সাথে সালমান এফ রহমানের ক্ষমতা ও প্রভাব-প্রতিপত্তি বেড়েছে। ব্যবসায়িক ক্ষেত্রে সফল ব্যক্তিরা নিজেদেরকে ব্যবসায়িক পরিমণ্ডল থেকে আরো বড় পরিমণ্ডলে মেলে ধরতে আগ্রহী হন। সালমান এফ রহমান এর ব্যতিক্রম নয়। তিনি ধীরে ধীরে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে জড়িত হয়ে পড়েন।
পত্রপত্রিকায় অনেকবার এসেছে এবং ইতিহাসবিদদের বহু ইন্টারভিউয়ে প্রকাশ পেয়েছে সালমান এফ রহমান বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাই শেখ কামালের খুবই ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলেন। এই সম্পর্কের সদ্ব্যবহার সালমান এফ রহমান করেছেন। বর্তমানে তিনি একজন সংসদ সদস্য এবং তার উপরেও কেবিনেট মিনিস্টার এর পদমর্যাদায় অধীন একজন উপদেষ্টা। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপদেষ্টা। মেইনস্ট্রিম মিডিয়া বলে তিনি একজন প্রভাবশালী উপদেষ্টা।
একাধারে একজন সফল ব্যবসায়ী, সংসদ সদস্য এবং প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা হিসেবে তিনি একজন ক্ষমতাবান মানুষ। এর উপরে তিনি অর্থনীতি এবং ব্যবসা-বাণিজ্য ভালই বোঝেন। এবং এর উপরেও, পারিবারিকভাবে তিনি রাজনীতির জ্ঞান রাখেন। তার বাবা পাকিস্তান আমলে মন্ত্রী ছিলেন। রাজনীতি কি এবং কিভাবে করতে হয় সেটা সালমান এফ রহমান এবং তাঁর পরিবারের সকলে খুব ভালোভাবে জানেন। এইসবের সংমিশ্রণে সালমান এফ রহমান বর্তমানে একজন প্রভাবশালী মানুষ এবং সেই প্রভাব দিয়ে তিনি বাংলাদেশের সার্বিক রাজনীতি এবং অর্থনীতি প্রভাবিত করার ক্ষমতা রাখেন। তার ওয়েবসাইটও সে রকম ইঙ্গিত দেয়।
বাংলাদেশ যতবার বিএনপি সরকার গঠন করেছে ততোবারই বেক্সিমকো গ্রুপ এবং সালমান এফ রহমান বিপদে পড়েছেন। তাই ধরে নেয়া যায় বিএনপি'র সাথে তাঁর সম্পর্ক ভালো নয়। তাই আওয়ামী লীগ যখনই সরকার গঠন করবে তখনই সালমান এফ রহমান একজন প্রভাবশালী নীতিনির্ধারক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করবেন, এটা স্বাভাবিক।
একটা দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখে যে কয়েকটি বিষয়ে তার মধ্যে বিনিয়োগ অন্যতম। বর্তমানে শেখ হাসিনার অধীন আওয়ামী লীগ সরকার বিনিয়োগের ব্যাপারে যথেষ্ট সচেষ্ট। পত্র পত্রিকা মারফত যেসব খবর আসে এবং বাংলাদেশের খবরের চ্যানেল গুলো যেসব খবর প্রচার করে সেসব খবর একটু মনোযোগ দিয়ে দেখলেই বোঝা যায় বিনিয়োগ বাড়ানোর ব্যাপারে সালমান এফ রহমান কাজ করে যাচ্ছেন গত কয়েক বছত ধরে। তার কর্মপরিধি শুধুমাত্র বিনিয়োগ কতটুক আসছে সে ব্যাপারে সীমাবদ্ধ নয় বরং কি কি পদক্ষেপ গ্রহণ করলে বাংলাদেশের বৈদেশিক বিনিয়োগ বাড়বে এবং কি কি পদক্ষেপ নিলে সারা পৃথিবীর সবচেয়ে বড় বড় ইনভেস্টর বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী হবে সেই ব্যাপারে সালমান এফ রহমানের আগ্রহ রয়েছে এবং তিনি পদক্ষেপ নিয়ে চলেছেন। বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দা, কোভিদ নাইনটিন মহামারী এবং পৃথিবীর নানা জায়গায় যুদ্ধ বাংলাদেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল। সফল ব্যাবসায়ি ও নীতি-নির্ধারক হিসাবে সালমান এফ রহমানের নেয়া পদক্ষেপগুলো এই সময়ে বাংলাদেশের অর্থনীতির চাকা সচল এবং সবল রাখতে সাহায্য করেছে। তার নেওয়া পদক্ষেপগুলো ফল বাংলাদেশে ইতিমধ্যে পাওয়া শুরু করেছে। গত দশবছর বাংলাদেশের জন্য পথচলা খুব একটা সহজ ছিল না। সালমান এফ রহমান তার বুদ্ধি ও বিবেচনা দিয়ে পরিস্থিতি সামাল দিয়েছেন। তার সফলতা তাকে আরো ক্ষমতাবান করে তুলেছে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক পরিমণ্ডলে।
তথ্য উপাত্ত এবং মেইনস্ট্রিমে আসা খবরগুলো অবশ্য কোনভাবেই ইঙ্গিত দেয় না যে সালমান এফ রহমান বাংলাদেশের রাজনীতিকে প্রভাবিত করার অবস্থানে রয়েছেন। এ ব্যাপারে বরং তিনি নীরব। ঢাকা ১ আসনে তিনি প্রধান ব্যক্তি কিন্তু দেশের সার্বিক রাজনীতিতে তিনি একদমই নীরব। তার কাজকর্ম একটু পর্যালোচনা করলে বোঝা যায় যে তার আগ্রহের জায়গাটি বিনিয়োগ বাড়ানো, ব্যবসা-বাণিজ্য সচল রাখা এবং সার্বিক ব্যবসা সহজ করার মধ্যে সীমাবদ্ধ।
Comments
Post a Comment